করোনা পরিস্থিতি আর বন্যার কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর বৃহস্পতিবার সারাদেশে শুরু হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। বরাবরের মতো এবারো প্রতিবন্ধী কিংবা কারাগারে বসে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন অনেকে। তবে এবার একসঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছেন এক দম্পতি। তাও আবার ৪০ বছর বয়সে এসে।
বৃহস্পতিবার নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর শহরের বেগম রোকেয়া গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তারা।
এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া দম্পতি হলেন- গুরুদাসপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খামারনাচঁকৈড় মহল্লার সাবেক কাউন্সিলর ৪০ বছর বয়সী মো. ফজলুর রহমান ও তার স্ত্রী ৩০ বছরের. মর্জিনা বেগম। তারা উপজেলার বিয়াঘাট কারিগরি কমার্স কলেজের ভোকেশনাল শাখার শিক্ষার্থী।
পরীক্ষার্থী ফজলুর রহমান বলেন, আমার বয়স ৪০ পার হয়েছে। স্ত্রীর বয়স ৩০ বছর চলছে। আমাদের সংসারে একটি মেয়ে ও একটি ছেলে রয়েছে। দীর্ঘদিন পর পরামর্শ করে স্বামী-স্ত্রী মিলে বিয়াঘাট কারিগরি কমার্স কলেজে ২০২০ সালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই। নিয়মিত স্কুলে যেতে না পারলেও বাড়িতে দুজন পড়াশোনা করতাম। করোনার কারণে প্রথমে পরীক্ষা না হলেও ২০২২ সালে এসে এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে।
ফজলুর রহমান আরো বলেন, বৃহস্পতিবার বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় আমরা দুজন একসঙ্গে অংশ নেই। পরীক্ষা ভালো হয়েছে। শনিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছি। সাধ্যমতো চেষ্টা করবো উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার।
তিনি আরো বলেন, পাঁচ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করে মানুষের সেবা করেছি। অনেক জায়গায় ঘুরেছি। দেখেছি যারা নিরক্ষর তাদের কষ্ট ও তাদের ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যত। আমি এসএসসি পাস করার পর ডিপ্লোমা কোর্স করবো। আমার স্ত্রীকেও করাবো। একসময় ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে গর্ববোধ করবে তাদের মা-বাবাও শিক্ষিত।
মর্জিনা বেগম বলেন, আমি ২০০৯ সালে পড়াশোনা বাদ দিয়েছিলাম। আমার স্বামীর আগ্রহে দুজন পরামর্শ করে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছি। দুজন একসঙ্গে বাড়িতে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিচ্ছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এ বয়সে এসেও তাদের পড়াশোনার প্রতি যে আগ্রহ রয়েছে তা প্রশংসনীয়। তাদের সফলতা কামনা করি।