একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুই পাড়ের জনপদের যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন’্ন। আর বর্ষা মৌসুমে তো স্থানীয় লোকজনের বাড়ি থেকে বের হওয়া ছিল মুশকিলের। তাই একটি সেতু নির্মাণের দাবি ছিল গ্রামের বাসি’ন্দাদের। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তাদের এ দাবি পূরণ হয়নি।
অবশেষে গত ঈদুল আজহায় বি’ষয়টি ফটিকছড়ির কৃতিসন্তান তরুণ ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বিপ্লবের নজরে আসলে তিনি একটি অ’স্থায়ী কাঠের ব্রিজ করে দেওয়ার আশ্বা’স দেন। সেই লক্ষে নিজের অর্থায়নে করে দিয়েছেন ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সেতু। এতে হাসি ফুটেছে দুই পাড়ের বাসি’ন্দাদের মুখে।
জানা যায়, চট্রগ্রামের ফটিকছড়ির দাতঁমা’রা ইউনিয়নের মোহাম্ম’দপুর গ্রামে প্রায় ২৫০ পরিবারের বসবাস। তাদের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম মোহাম্ম’দপুর মা’দরাসা সড়ক। তাছাড়া আরো দুই তিনটি গ্রামের লোকজনও এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে কয়লা খাল পার ‘হতে হয় মানুষের। যেখানে নেই কোন ব্রিজ বা কালভার্ট। শুকনো মৌসুমে কোনমতে বড় এই খালটি পার ‘হতে পারলেও বর্ষায় গ্রামটির জনগণ কার্যত বন্ধি অবস্থায় থাকে।
উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি বালুটিলা মোহাম্ম’দপুর গ্রামটিতে। গু’রুত্বপূর্ণ এই খাল পারাপারে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে ‘হতো। এতে শিশু, নারী ও বৃ’দ্ধদের দুর্ভোগ পোহাতেন সবচেয়ে বেশি। আর রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া যে কত ক’ষ্টের তা বলারই অ’পেক্ষা রাখে না। এছাড়া গ্রামটিতে চলাচলের রাস্তা খারাপ থাকায় অনেক ছেলে-মেয়ের বিয়ে পর্যন্ত হচ্ছিল না।
চট্রগ্রামের ফটিকছড়ির স্থানীয় সাংবাদিক মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, শিল্পপতি মেহেদী হাসান বিপ্লব জেএইচএম ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের বাংলাদেশের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি)। একই ইউনিয়নের বালুটিলা এলাকায় জন্মগ্রহণ করা এই শিল্পপতিকে গত ঈদুল আজহায় ওই গ্রামবাসীর দুঃখের কথা জানালে তিনি সমস্যা সমাধানের আশ্বা’স দেন। এমনকি তখন নিজে গিয়ে খালটি পরিদর্শন করে আসেন তিনি।
এরপর তার ব্যক্তিগত উপার্জনের টাকা থেকে অর্ধলক্ষ টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে দেন তিনি। যেখানে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছেন গ্রামবাসী। সেতুটি হওয়ায় গ্রামের মানুষের ক’ষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মোঃ ইউসুফ আলী বলেন, মোহাম্ম’দপুর গ্রামটি দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত ছিল। গু’রুত্বপূর্ণ এই ব্রিজটি সরকারের পক্ষ থেকে পরপর দুইবার টেন্ডার হয়, পরে ঊর্ধ্বতন কর্মক’র্তারা পরিদর্শনে আসলে দেখেন কালক্রমে দুই পাশ ভেঙে খালটি বড় হয়ে গেছে। ফলে শেষ পর্যন্ত আর ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়নি। এলাকার কৃতিসন্তান শিল্পপতি মেহেদি হাসানের দেওয়া কাঠের ব্রীজ পেয়ে আনন্দিত এলাকাবাসী। তবে এখানে একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের দাবি গ্রামবাসী সবার।
স্থানীয়রা জানান, মেহেদী হাসান বিপ্লব মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই একজন সফল ব্যবসায়ী। নানা অ’প্রতুলতার মধ্যেও তিনি খুঁজে বেড়ান অ’সুস্থ এবং অ’সহায় মানুষের। যার কাছে ধর্ম-বর্ণ বলে পৃথক কেউ নন। সবাই তার কাছে আপন। এলাকায় তিনি ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত হয়েছেন।
জানতে চাইলে জেএইচএম ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের বাংলাদেশের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) মোঃ মেহেদি হাসান বিপ্লব বলেন, ‘মোহাম্ম’দপুর আমা’র পার্শ্ববর্তী গ্রাম। কিন্তু আগে আমি জানতাম না একটি সেতুর অভাবে এলাকার মানুষ দিনের পর দিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এবার ঈদ উদযাপন করতে বাড়িতে গেলে ওই গ্রামের লোকজন একটি সেতু না থাকার আ’ক্ষেপ আমা’র কাছে এসে জানান। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমাধানের আশ্বা’স দেই এবং পরবর্তীতে আমি নিজে গিয়ে দেখে এসে সম্প্রতি ব্যক্তিগত অর্থায়নে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে দিয়েছি।’
মেহেদী হাসান বিপ্লব বলেন বলেন, ‘মানবসেবা পৃথিবীতে সবচেয়ে উত্তম কাজ হওয়ায় আমি ব্যবসা থেকে যা আয় করেছি, সেই আয়ের কিছু অংশ মানুষকে এখন দান করার চে’ষ্টা করছি।’ এসময় সবার কাছে দোয়া চান তিনি।
Leave a Reply