তাইমুর শাহরিয়ার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ছাত্রটির ফলাফল সাধারণ মানের হলেও এখন তিনি বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। অদম্য ইচ্ছা ও অধ্যবসায়ের বলে তিনি এমন সফলতা দেখিয়েছেন। এসএসসিতে দুই বার ফেল করে ব্যাকবেঞ্চারদের দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। এসএসসি ও এইচএসসিতে কম জিপিএ নিয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চান্স পান তিনি। এর পরেই পাল্টে যেতে থাকেন শাহরিয়ার। স্বপ্ন দেখতে থাকেন একসময় বিসিএস ক্যাডার হবেন। সে লক্ষ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে
যেতে থাকেন। একসময় সফলতা তার পায়ে লুটিয়ে পড়ে। তিনি এখন সরকারি কবি নজরুল কলেজে শিক্ষকতা করছেন। জানা গেছে, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছেন শাহরিয়ার। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বরাবরই ছিলেন প্রথম। অথচ এসএসসি পরীক্ষায় রসায়নে ফেল করে ব্যাকবেঞ্চারদের দলে নাম লেখান তিনি। আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীরা হতবাক। অপবাদ মাথায় নিয়ে পরের বছর পরীক্ষা দিলেন শাহরিয়ার। কিন্তু এবারও রসায়নে ফেল। হতাশায় পড়ে গেলেন তিনি।
আরো পড়ুনঃ
যে কৌশলে জীবনের প্রথম বিসিএসেই ফরেইন ক্যাডারে ১ম হলেন রহমত আলী
ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটেও প্রথম মাদরাসা শিক্ষার্থী সাফওয়ান
ঢাবির সাদমান এখন গুগলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় চুয়েটের ২ শিক্ষক
আরো পড়ুনঃ
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হলেন মাদরাসা শিক্ষার্থী
দুই সন্তান, সংসার ও চাকরি সামলেও ক্যাডার হলেন ঢাবির শাহনাজ
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পড়া ছাত্র ওয়ালিদ বিসিএসে প্রথম।
প্রচুর পড়ালেখা করতাম বলে আজ প্রশাসন ক্যাডারে ২য় হয়েছিঃ হাসিবুর রহমান
সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে বিসিএস ক্যাডার হলেন নাঈমা
এসএসসিতে ফেল করেও বিসিএস ক্যাডারে প্রথম হলেন তাইমুর
জীবনের এমন হতাশার মুহূর্তে বাবার সাপোর্টে ঘুরে দাঁড়ান শাহরিয়ার। বাবা মো. মোতালেব হাওলাদার নান্নুর উক্তিকে শক্তি হিসেবে নিলেন শাহরিয়ার। ‘জ্বলার মতো আগুন থাকলে, একদিন তা জ্বলে উঠবেই। দেরিতে হলেও। প্রতিভা থাকলে, তা একদিন প্রকাশ পাবেই। তাই ঘাবড়ানোর কিছু নেই।’ শাহরিয়ার অবশেষে ২০০৩ সালে বরগুনার আমতলী এম ইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৩.৭৫ নিয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর আমতলী ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৮০
পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তবে এতো কিছুর পরও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। ঢাবি থেকে ২০০৯ সালে অনার্স এবং ২০১০ সালে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর পুরোদমে চলতে থাকে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি। ৩১তম বিসিএসে অংশ নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় টিকলেও পরবর্তী ধাপ অতিক্রম করতে পারেননি। ৩২তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়নি। অবশেষে ৩৩তম বিসিএসে তুমুল আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেকে উপস্থাপন
করেন শাহরিয়ার। এসএসসিতে দুইবার ফেল করা সেই ছাত্রটি নতুন উদ্যেমে শুরু করেন পড়াশোনা। তার পছন্দের তালিকার প্রথমে পুলিশ ক্যাডার এবং দ্বিতীয়টি প্রশাসন ক্যাডারে থাকলেও সেটি তার ভাগ্যে হয়নি। শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন তিনি। তার প্রথম কর্মস্থল ছিল বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজ। এখন তিনি ঢাকার সরকারি কবি নজরুল কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের লেকচারার।
Leave a Reply