আট বছর বয়সে জুয়েল আলীর বাবা মারা যান। বড় ছেলে হিসেবে মায়ের সঙ্গে সংসার চালানোর দায়িত্ব পড়ে তাঁর ওপর। রাজমিস্ত্রির জোগালি হিসেবে কাজে যোগ দিয়ে সংসারের হাল ধরেন। কিন্তু বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় না পাওয়ায় লেখাপড়া সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। তবে শিক্ষকদের সহযোগিতায় তিনি আবার পড়ালেখায় ফিরে আসেন।
পড়ালেখায় ফিরে আসার পর প্রতিটি পরীক্ষায় ভালো ফল করেন। ভালো ফলের জন্য নানা বৃত্তি পান। বৃত্তির টাকা দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হন রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট)। পুরকৌশল বিভাগ থেকে পাস করার পর ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেন। সদ্য প্রকাশিত ফলে তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
জুয়েল আলীর (৩২) এ সাফল্যে তিনি যেমন স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন, তেমনি তাঁর পুরো পরিবার আনন্দে ভাসছে। তিনি নাটোরের লালপুর উপজেলার দক্ষিণ লালপুর গ্রামের মৃত হাসান মণ্ডল ও জামেলা বেগমের ছেলে।
মা জামেলা বেগম বলেন, অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর অর্থাভাবে বারবার জুয়েলের পড়ালেখা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু সে দমে যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে টিউশনি করে পড়ালেখা ঠিকই চালিয়েছেন। খুব কষ্ট করে তাঁকে পড়ালেখা করতে হয়েছে।
জামেলা আরও বলেন, ‘আমাদের কষ্টের দিনগুলো এখন শেষ হয়েছে। আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। দোয়া করি, সে যেন পড়ালেখার মতো চাকরিতেও তাঁর সাফল্য ধরে রাখতে পারে।’
একসঙ্গে দুই বোনের বিসিএস জয়
জুয়েল আলী বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর মা অসহায় হয়ে পড়েন। এর-ওর কাছ থেকে ধারদেনা করে খাবার জোগাড় করতে থাকেন। বিষয়টি তাঁর ভালো লাগত না। মাকে সহযোগিতার জন্য রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ নিয়েছিলেন। কিছুদিনের জন্য পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তখন বুঝতে পারেন, এ কাজ করে মায়ের মুখে হাসি ফোটানো যাবে না। তাই কাজের পাশাপাশি আবার পড়ালেখা শুরু করেন। ভালো ফল করায় শিক্ষকেরা খুশি হয়ে বিনা বেতনে তাঁকে পড়ার সুযোগ দিতেন। বইখাতাও কিনে দিতেন।
তিনি বলেন, এইচএসসি পাসের পর শারীরিক পরিশ্রম ছেড়ে দিয়ে নিজে টিউশনি শুরু করেন। বৃত্তির টাকা ও টিউশন ফি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালান। স্নাতক শেষ করে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। স্ত্রীও তাঁকে সাহস জোগান। অবশেষে বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এতে পরিবারের সবাই অনেক খুশি হয়েছেন।
‘ফল দেখে চিৎকার করে মায়ের পা ধরে বসে ছিলাম’
জুয়েল বলেন, ‘বিসিএসের ফলের পর আমি নিজে স্বস্তি ফিরে পেয়েছি। পুরো পরিবার এখন সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখছে। ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করব। আমি আমার অতীত কখনো ভুলে যাব না। প্রতিটি মুহূর্তে দেশের কল্যাণে কাজ করব।’
লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, জুয়েল সব সময় ভালো ফল করে তাঁদের গর্বিত করেছে। জুয়েলকে নিয়ে তাঁরা অনেক আশাবাদী ছিলেন। জুয়েলকে অভিনন্দন।